স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম? কুরআন ও হাদিস যা বলে।

স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম? একদিন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছিল বিয়ের পর স্ত্রীর স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেবে না। তাকিয়েও দেখবেন না।

তার সেই বন্ধু তাকে তার এই ইচ্ছার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, ‘এটি কি পশুর যৌনতা নয়?

কিন্তু দ্বিতীয় বন্ধু এই উত্তর শুনে রেগে গেল। সে যুক্তি দিল, যে চুম্বন প্রেম প্রকাশের সর্বোত্তম উপায়। সেই চুম্বনটা হোক কপালে বা গালে বা বুকে বা নাভিতে বা যৌনিতে। অনুভূতি এবং অধিকার শরীরের সর্বত্র সমান। আল্লাহ তায়ালা যে মেয়ের সাথে সহবাস হালাল করেছেন তার গোপনাঙ্গ না দেখার কোন কারণ নেই।

প্রিয় পাঠক, এই দুই বন্ধুর গল্পে কে ঠিক? প্রথম বন্ধু না কিদ্বিতীয় বন্ধু? ইসলামী আইনে তাদের যুক্তি ও দাবির মূল্যায়ন কি?

আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করব – স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম? আমি একটি ডকুমেন্টারি উপায়ে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।

স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম?

না, স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া হারাম নয়। স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক ভোগের ক্ষেত্রে বৈধতা হল মূল, যতক্ষণ না তার বিপরীত কোনো দলিল পাওয়া যায়। তাই তারা তাদের ইচ্ছা ও চাহিদার ভিত্তিতে যৌন উপভোগ ও আনন্দ করতে পারে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রী যৌন মিলনের ব্যাপারে বলেন, –

‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের ফসলক্ষেত্র। তাই তোমার তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বিচরণ কর। (সূরা বাকারা, ২২৩)

অন্য আয়াতে বলেন-

“তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীরা) তাদের পোশাক। কর।” (সূরা আল-বাকারা – 17)

এই দুটি আয়াত স্বামী-স্ত্রীকে যৌন মিলনে অবাধ স্বাধীনতা দেয়। তারা তাদের ইচ্ছামত একে অপরের সাথে উপভোগ করতে পারে।

হোক সেটা মূল্যবান অলঙ্কার ও পোশাক পরিধান করিয়ে রূপের সৌন্দর্য উপভোগ বা সারা শরীর উন্মুক্ত করে একে অপরের গোপনাঙ্গ দেখে উপভোগ। অথবা শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে বা মুখ দিয়ে যেভাবেই উপভোগ করুক সেটা হালাল হবে।

স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কখন হারাম?

স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের ক্ষেত্রে সব উপায়ই বৈধ হলেও দুটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার।

প্রথমটি হল হারাম যাবতীয় বিষয় থেকে বিরত থাকা যেমন পায়ু সহবাস, স্ত্রীর মাসিকের সময় সহবাস, ফরয রোযার সময় সহবাস, হজ্জ ও ওমরার ইহরাম অবস্থায় সহবাস ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ সা. মলদ্বারে সহবাস নিষেধ করেছেন-

‘যারা স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সহবাস করে তারা অভিশপ্ত।’ অন্য কথায়, ‘যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না।’ (আবু দাউদ – ২১৭৪)।

এভাবে তিনি ঋতুস্রাব ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় সহবাস নিষিদ্ধ করেছেন-

“যে ব্যক্তি ঋতুমতী মহিলার সাথে বা তার মলদ্বারে সহবাস করে বা কোন গণকের কাছে আসে এবং তাকে বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মাদের প্রতি অবতীর্ণ সমস্ত কিছু অস্বীকার করেছে” (তিরমিযী – 135)।

একইভাবে ফরজ রোজা ও ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা বিভিন্ন দলিলের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ।

দ্বিতীয়টি হল: মানুষের স্বভাব, উত্তম চরিত্র এবং গড় রুচির পরিপন্থী সকল যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

এই নীতির আলোকে, অনেক পণ্ডিত ওরাল সেক্স না করার জন্য উৎসাহিত করেন। কারণ ওরাল সেক্স রুচি বিরোধী।

কিন্তু আজকে আমরা যে মাআলা নিয়ে আলোচনা করছি তা ওরাল সেক্স বা যৌনাঙ্গ চোষা নয়। এটি স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম, এই বিষয়ে। সুতরাং, এটি সম্পূর্ণ বৈধ।

ইমামদের মতামত ও বিশ্লেষণ

অনেক ইমাম ও মুহাদ্দিস বলেছেন যে, ইসলামে স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া বৈধ। নিচে এরকম কিছু মতামত দেওয়া হল।

এক – ইমাম ইবনে আবিদীন (হানাফী) – রাহিমাহুল্লাহ – বলেন –
ইমাম আবু ইউসুফ – রহিমাহুল্লাহ – ইমাম আবু হানিফা – রহিমাহুল্লাহ – কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন একজন পুরুষ সম্পর্কে যে তার স্ত্রীকে যোনি স্পর্শ করে। আর স্ত্রীও তার স্বামীর যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে।

ইমাম আবু হানিফা বলেন, কোন সমস্যা নেই। আমি আশা করি এর বিনিময়ে তারা সওয়াব পাবে। (রদ্দুল মুহতার)

দুই – কাজী ইবনুল আরাবী (মালিকী) বলেন –

স্বামী তার স্ত্রীর যৌনাঙ্গ দেখতে পারবে কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। একটি অভিমত অনুযায়ী এটা বৈধ । কারণ যার সাথে সহবাস বৈধ তারা যৌনাঙ্গ দেখাটা আরো সহজে বৈধ হওয়ার কথা।

তিন – আসবাগ – রহিমাহুল্লাহ – বলেন – জিহ্বা দ্বারা স্ত্রীর যৌনি চাটা বৈধ।

চার- মাওয়াহিবুল জলিল শরহু মুখতাসারী খলিল গ্রন্থে বলা হয়, –

ইমাম আসবাগকে বলা হয়েছিল যে, কিছু লোক তার স্ত্রীর যৌনিতে মুখ দেওয়াকে মাকরুহ মনে করে। তিনি বলেন, যারা এটাকে মাকরুহ বলছেন তারা এটাকে শরিয়ার বিধি হিসেবে বলছেন না। তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বলছেন। এতে শরিয়ার দৃষ্টিতে এতে কোনো সমস্যা নেই। এটা মাকরূহ নয়।

ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সহবাসের সময় স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো অবৈধ নয়। অনুরূপভাবে, অন্য বর্ণনা অনুসারে, জিহ্বা দ্বারা চাটতেও অসুবিধা নেই।

পাঁচ – ইমাম ফিনানী (শাফেঈ) বলেন-

স্বামী তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথ ছাড়া সব ধরনের যৌন উপভোগ করতে পারে, এমনকি যদি পরস্পর যৌনাঙ্গ চুষে উপভোগ করে

ছয় – ইমাম আল-মারদাবী (হাম্বলী) আল-ইনসাফ-এ বলেছেন:
সহবাসের পূর্বে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে চুম্বন করা জায়েয। তবে সহবাসের পর তা মাকরূহ। একইভাবে, একজন স্ত্রী তার স্বামীর যৌনাঙ্গে চুম্বন করতে পারে।

সাত: স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন মৌলিকভাবে বৈধ। তাই কুরআন বা হাদিসের সুস্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যৌন মিলনের কোনো পদ্ধতিকে হারাম বলা যাবে না।

কিছু প্রশ্ন উত্তর

স্ত্রীর ঠোঁটে কি চুমু দেওয়া যাবে?

অবশ্য স্ত্রীর ঠোঁটে চুম্বন করা হালাল। এটা শুধু হালালই নয়, সওয়াবও বটে। এছাড়াও, গ্লাসে জল বা চা কফি পান করার সময়, স্ত্রী যেখানে ঠোঁট দিয়ে পান করেছেন সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে পান করা সুন্নাহ।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে এমন করতেন। এমনকি স্ত্রীর চুল আঁচড়ানো, কাপড় ধোয়া এবং অন্যান্য কাজে সাহায্য করাও সওয়াবের কাজ।

রোজা অবস্থায় স্ত্রীর যোনিতে মুখ দেয়া কি হারাম?

রোজাদার স্বামী-স্ত্রী যদি এটা করার ফলে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এটা তাদের জন্য বৈধ। তবে এটা থেকে বিরত থাকা উত্তর বিশেষ করে রোজা অবস্থায়।

স্ত্রীর নাভিতে চুম্বন করা যাবে কী?

হ্যাঁ, আপনি এটি করতে পারবেন। চুম্বনের ক্ষেত্রে, চুম্বন গালে হোক, ঠোঁটে হোক বা নাভিতে হোক, সব একই। একইভাবে, সমস্ত ধরণের সহবাসের আগে ফোরপ্লে যেমন, স্পর্শ করা, ঘষা দেওয়া, হালকা কামড় দেওয়া, আঘাত করা, ধাক্কা দেওয়া, আলিঙ্গন করা ইত্যাদি হালাল।

আমি কি আমার স্ত্রীর জিভ চুষতে পারি?

হ্যাঁ, আপনি আপনার স্ত্রীর জিভ চুষতে পারেন। তবে রোজা অবস্থায় এটা করা যাবে না। জিহ্বা চোষার ফলে একে অপরের জিভ গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন স্তনের বোঁটা চোষার ফলে দুধ মুখে এসে গলার নিচে চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

Leave a Comment